ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর
ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর

 ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর

একুশে ফেব্রুয়ারি— শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনটি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। যার ফলশ্রুতিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়। সেই রক্ত রঞ্জিত বাংলা ভাষা এখন বিশ্বজুড়ে ব্যাপৃত।

ভাষা আন্দোলন

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। য়। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

ফলে পূর্ব বাংলায় ১৯৪৭ সালে 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদ অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

পূর্ব পাকিস্তানের কংগ্রেস দলের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ প্রস্তাবে সংশোধনী এনে বাংলাকেও পরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি জানান। ১৯ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

২১ মার্চ ১৯৪৮ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তিনি ঘোষণা দেন, “উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা” । ২৪ মার্চ তিনি কার্জন হলে পুনরায় একই কথা বলেন।

জিন্নাহ'র এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১১ মার্চ ১৯৫০ বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়।

২৫ জানুয়ারি ১৯৫২ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় আসেন এবং ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় জিন্নাহ'র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু। ফলস্বরূপ বাংলা ভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। ৩০ জানুয়ারি ১৯৫২ গঠিত ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ'

২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ নুরুল আমীন সরকার আন্দোলনের ভয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন সালাম-রফিক জব্বার-বরকতসহ আরও অনেকে। একুশে ফেব্রুয়ারির এ ঘটনার মধ্য দিয়ে
ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। | বাংলা ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে ১৯৫৪ অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর জাতীয় পরিষদের সদস্য ফরিদপুরের আদেল উদ্দিন আহমদের দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী জাতীয় পরিষদে ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়।

২৩ মার্চ ১৯৫৬ সংবিধান কার্যকরের মাধ্যমে তা সাংবিধানিক রূপ লাভ করে। সংবিধানের | ২১৪(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বলা হয় The State Language of Pakistan shall be Urdu & Bengali [পাকিস্তানের রা


ষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এবং বাংলা]। এরপর ১ মার্চ ১৯৬২ পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধানেও জাতীয় ভাষা হিসেবে ‘বাংলা' স্বীকৃতি পায়। সংবিধানের ২১৫ (১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বলা হয় পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু ও বাংলা। ১৯৭২ সালে গৃহীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।

(সূত্র। বাংলাদেশের সুধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, প্রথম খণ্ড (পৃষ্ঠা ২৩০), একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলন (পৃষ্ঠা ১৩৯) এবং জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫; লেখক- ভাষা সৈনিক অলি আহাদ (পৃষ্ঠা ১৩০)৷

উক্ত দিবস কে মাথায় রেখে হিতসাধন যুব সংঘ এর আয়োজনে বর্ণবিলাস কোচিং সেন্টারের বাচ্চাদের নিয়ে আয়োজন৷











0 Response to "ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর "

Post a Comment

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel